আদিকালেও মানুষ পাথর ব্যবহার করত । প্রস্তরযুগের মানুষ পাথরকে আত্মরক্ষার ও পশু শিকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত । কালক্রমে এ পাথর নির্মাণের প্রধান উপকরণে পরিণত হয় । পাথর খুবই শক্ত , মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী সামগ্রী । সড়ক , সেতু , টাওয়ার , ইমারত ইত্যাদি নির্মাণকার্যে পাথর ব্যবহার করা যায় । যে সকল পাথর প্রকৃতি প্রদত্ত শিলা হতে সংগৃহীত , দৃঢ় , শক্ত , সমসত্ত্ব , অগ্নিরোধী , ক্ষয়রোধী , টেকসই , ওজনে ভারী , কার্যোপযোগী আকার – আকৃতিসম্পন্ন , সন্তোষজনক তাপ ও চাপসহন ক্ষমতাসম্পন্ন , আকর্ষণীয় বর্ণ ও অবয়ববিশিষ্ট , যুক্তিসঙ্গত মূল্যে সহজে পাওয়া যায় , এ জাতীয় পাথরই নির্মাণ পাথর । নির্মাণকাজের সার্বিক দিক বিবেচনা করে পাথর নির্বাচন করলে আবহাওয়া ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক প্রতিক্রিয়া পাথরের তেমন ক্ষতিসাধন করতে পারে না । নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রীসমূহের মধ্যে পাথরের ন্যায় স্থায়িত্বশীল সামগ্রী অন্য আর একটিও নেই বিধায় পাথরকে নির্মাণ উপকরণের রাজা বলা হয় । যদিও শিলা এবং পাথর সচরাচর একই অর্থে ব্যবহৃত হয় । মূলত শিলা ভূতাত্ত্বিক ধারণা , যার আওতা ব্যাপক ও বিস্তৃত । পৃথিবী গঠনকারী খনিজের যৌগই শিলা। নির্মাণসামগ্রীর দৃষ্টিকোণ হতে প্রাকৃতিকভাবে জমাটবদ্ধ খনিজের প্রকাণ্ড আকারের কঠিন বস্তুই শিলা এবং নির্মাণে ব্যবহারের নির্দিষ্ট আকার – আকৃতির শিলাখণ্ডই পাথর । অর্থাৎ শিলার বাণিজ্যিক উৎপাদনই পাথর ।
ওয়ালে , সিড়িতে ও রেলিং এ কৃত্রিম পাথর ব্যবহার করা হয় । উত্তম নির্মাণ পাথরের বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্মাণকাজে ব্যবহারোপযোগী উত্তম পাথরের গড়ন ও গঠনশৈলী নিখুঁত হবে । এর পর্যাপ্ত কাঠিন্য , ঘাতসহনীয়তা , শক্তি , ক্ষয়রোধ ক্ষমতা , আগুন – বিদ্যুৎ – তাপরোধক ক্ষমতা ও কার্য সুবিধা থাকবে এবং তরল শোষণের ক্ষমতা খুবই নগণ্য হবে । এগুলোতে ছিদ্র খুবই কম থাকবে এবং অত্যধিক ভারী হবে না । এগুলো আকর্ষণীয় বর্ণের ও সৌন্দর্যবর্ধক হবে । নির্মাণকার্যে ব্যবহৃত উত্তম পাথরের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে দেয়া হলো
১ পাথরের গঠনশৈলীঃ
পাথরের উৎপত্তিতে যে প্রক্রিয়ায় পাথরের কণাগুলো সন্নিবেশিত হয় , প্রক্রিয়ার উপর পাথরের গঠনশৈলী নির্ভর করে । পাথরে তিন ধরনের গঠনশৈলী পরিলক্ষিত হয় , যথা ( ক ) অস্তরিত , ( খ ) স্তরিত , ( গ ) ভাজকৃত বা বলিত । গলিত লাভা ঠান্ডা হয়ে আগ্নেয় পাথরের সৃষ্টি করে । এ জাতীয় পাথরে কোনো স্তর থাকে না । তাই এগুলো নির্মাণকার্যের জন্য সর্বাধিক উপযোগী । পাললিক পাথর স্তরে স্তরে জমা হয়ে সৃষ্টি হয় বিধায় এগুলোর গঠনশৈলী স্তরিত । এদেরকে ফাটল তল বরাবর পরতে পরতে বিভক্ত করা সহজসাধ্য । রূপান্তরিত পাথরের গঠনশৈলী বলিত বা ভাঁজকৃত । যদিও রূপান্তরিত পাথরে স্তর দেখা যায় , কিন্তু এ স্তর সর্বত্র সমান নয় । পাললিক পাথর শক্ত এবং স্থায়িত্বশীল নয় । তবে রূপান্তরিত পাথর আগ্নেয় পাথরের ন্যায় শক্ত এবং স্থায়িত্বশীল ।
২ পাথরের গ্রন্থনশৈলীঃ
পাথরের উপাদানসমূহের আকার – আকৃতি ও সন্নিবেশকে পাথরের যথন বলা হয় । পাথরের প্রথনের উপর এর শক্ততা নির্ভর করে । ঠাসা দানায় সুসংবদ্ধ এথনের সমসত্ত্ব পাথরে আবহাওয়ার প্রতিকূলতা ক্ষতিসাধন করতে পারে না । সূক্ষ্মদানায় দৃঢ়ভাবে গঠিত পাথর বেশ স্থায়িত্বশীল এবং নির্মাণের জন্য উপযোগী । পাথরের ভগ্নপৃষ্ঠ দেখে পাথরের গ্রথন বুঝা যায় । দানাদার পাথরের ভগ্নতল সমান এবং অদানাদার পাথরের ভগ্নতল অসমান । দানাদার গ্রথনের পাথর ইমারতের জন্য এবং অদানাদার গ্রথনের পাথর রাস্তা নির্মাণের জন্য উপযোগী ।
৩ সচ্ছিদ্রভা ও শোষ্যতা : কোনো পাথরের আয়তনের সাথে এর অভ্যন্তরস্থ ছিদ্রের আয়তনের অনুপাতের শতকরা হারকে সচ্ছিদ্রতা বা পরোসিটি বলা হয় । ছিদ্রময় পাথর দুর্বল । বহিঃপৃষ্ঠের দেওয়ালে ছিদ্রময় পাথর ব্যবহার করলে বৃষ্টির পানি রাসায়নিকভাবে সক্রিয় হয়ে পাথরে বিযোজন ও বিভাজন ঘটায় । যখন পাথর পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয় তখন ছিদ্রময় পাথর অধিক পানি শোষণ করে । মার্বেলের ন্যায় শক্ত ও শক্তিশালী পাথরও প্রায় 1 % পানি শোষণ করে । অপরপক্ষে , বেলেপাথর প্রায় 20 % পানি শোষণ করে । তাই সহজেই বলা যায় , বেলেপাথর দুর্বল পাথর । শীতপ্রধান অঞ্চলে পাথরের ছিদ্রে জমা পানি বরফ হয়ে আয়তনে বৃদ্ধি পায় । ফলে অভ্যন্তরস্থ চাপে পাথর বিভাজিত হয়ে ফাটল সৃষ্টি করে । হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার – এর ক্ষেত্রে ছিদ্রময় পাথর ব্যবহার করা অনুচিত । , ।
৪ আপেক্ষিক গুরুত্ব ও ঘনত্ব : পাথরের মোট ওজনকে তার মোট আয়তন দিয়ে ভাগ করলে ঘনত্ব পাওয়া যায় । অধিক ঘনত্বের পাথরের আপেক্ষিক গুরুত্বও অধিক হয় এবং শক্তিও অধিক হয় । অপেক্ষাকৃত অধিক ঘনত্বের দৃঢ় ও সুসংবদ্ধ পাথরের আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.7 হতে 2.8 এবং অসংবদ্ধ ঢিলা পাথরের আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.4 এর মতো ।ভারী পাথর ভিত বাঁধ , ঠেস দেওয়াল , জেটি , ডকইয়ার্ড ইত্যাদির কাজে এবং হালকা পাথর খিলান ও অলঙ্কারমূলক কাজে ব্যবহার করা হয় ।
৫ পাথরের কাঠিন্য , ঘাতসহন ক্ষমতা ও শক্তি : যে পাথর দ্বারা অন পাথরের উপর আঁচড় বা দাগকাটা যায় , তার কাঠিন্য অধিক । যেমন- জিপসাম পাথর দিয়ে ট্যাঙ্ক পাথরে আঁচড় কাটা যায় , তাই জিপসামের কাঠিন্য ট্যাঙ্ক – এর চেয়ে বেশি । যে সকল পাথর খুব ঠাসা স্ফটিক দানায় গঠিত সে সকল পাথর অপেক্ষাকৃত অধিক।
সাজ্জাদ হুসাইন
জুনিয়র ইন্সট্রাকটর
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট